শবে বরাত কী?
=================================================
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ إن الحمد لله نحمده ونستعينه ونستغفره ونعوذ بالله من شرور أنفسنا ومن سيئات أعمالنا من يهده الله فلا مضل له ومن يضلل فلا هادي له، وأشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له وأشهد أن محمدا عبده ورسوله-اما بعد
“শব” শব্দটা ফার্সি। যার অর্থ হল-রাত। আর বরআত এটি আরবী শব্দ। মূলত
হল- ﺑﺮﺍﺀﺕ যার অর্থ হল “মুক্তি” তথা জাহান্নাম থেকে মুক্তির রাত হল শবে বরআত। বরাত বলাটা ভুল। কারণ শবে বরাত(ﺑﺮﺍﺕ ) মানে হল বিয়ের রাত। সুতরাং আমরা বলব-শবে বরআত( ﺷﺐ ﺑﺮﺍﺀﺕ )শবে বরআতকে হাদিসের পরিভাষায় বলা হয়েছে “লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান"( ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎن ) তথা শাবানের অর্ধ মাসের রাত্রি।
শবে বরআত হচ্ছে ইসলামের বিশেষ রাত্রিসমূহের মধ্যে একটি রাত্র। যা শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্রিতে হয়ে থাকে। শবে বরআত-এর অর্থ হচ্ছে ‘মুক্তির রাত’ বা ‘নাজাতের রাত।’
শবে বরআত সম্পর্কে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ বর্ণনা ‘শব’ ফার্সী শব্দ। যার অর্থ হচ্ছে, রাত। আর বরআত আরবী শব্দ যা উর্দূ, ফার্সী, বাংলা ইত্যাদি সব ভাষাতেই ব্যবহার হয়ে থাকে। যার অর্থ ‘মুক্তি’ ও ‘নাজাত’ ইত্যাদি। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর ভাষা যেহেতু আরবী তাই ফার্সী ‘শব’ শব্দটি কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ না থাকাটাই স্বাভাবিক।
স্মর্তব্য যে, কুরআন শরীফ-এর ভাষায় ‘শবে বরআতকে’ ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ বা বরকতময় রজনী’ এবং হাদীছ শরীফ-এর ভাষায় শবে বরআতকে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান’ বা শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই আমি বরকতময় রজনীতে (শবে বরআতে) কুরআন শরীফ নাযিল করেছি অর্থাৎ নাযিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর আমিই ভয় প্রদর্শনকারী।উক্ত রাত্রিতে আমার পক্ষ থেকে সমস্ত প্রজ্ঞাময় কাজগুলো ফায়সালা করা হয়। আর নিশ্চয়ই আমিই প্রেরণকারী।” (সূরা দুখান-৩, ৪, ৫)
আর হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
ﻋﻦ ﺍﻡ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﺣﻀﺮﺕ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻗﺎﻟﺖ ﻓﻭﺳﻠﻢ ﻟﻴﻠﺔ ﻓﺎﺫﺍ ﻫﻮ ﺑﺎﻟﺒﻘﻴﻊ ﻓﻘﺎﻝ ﺍﻛﻨﺖ ﺗﺨﺎﻓﻴﻦ ﺍﻥ ﻳﺤﻴﻒ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻚ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ ﻗﻠﺖ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻧﻰ ﻇﻨﻨﺖ ﺍﻧﻚ ﺍﺗﻴﺖ ﺑﻌﺾ ﻧﺴﺎﺋﻚ ﻓﻘﺎﻝ ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻳﻨﺰﻝ ﻟﻴﻠﺔ
ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻓﻴﻐﻔﺮ ﻻﻛﺜﺮ ﻣﻦ ﻋﺪﺩ ﺷﻌﺮ ﻏﻨﻢ ﻛﻠﺐ
অর্থঃ উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহ’র হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার সাথে কোন এক রাত্রিতে রাত্রি যাপন করছিলাম। এক সময় তাঁকে বিছানা মুবারক-এ না পেয়ে আমি মনে করলাম যে, তিনি হয়তো অন্য কোন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিস সালামের হুজরা শরীফে তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর আমি তালাশ করে তাঁকে জান্নাতুল বাক্বীতে পেলাম। সেখানে তিনি উম্মতের জন্য আল্লাহ পাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। এ অবস্থা দেখে আমি স্বীয় হুজরা শরীফে ফিরে আসলে তিনিও ফিরে এসে আমাকে বললেন, আপনি কি মনে করেছেন, আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার সাথে আমানতের খিয়ানত করেছেন! আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি ধারণা করেছিলাম যে, আপনি হয়তো অপর কোন হুজরা শরীফে তাশরীফ নিয়েছেন।
অতঃপর হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি শা’বানের ১৫ তারিখ রাত্রিতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর তিনি বনী কালবের মেষের গায়ে যতো পশম রয়েছে তার চেয়ে অধিক সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, রযীন, মিশকাত)
অতএব প্রমাণিত হলো যে, কুরআন শরীফ হাদীছ শরীফেই শবে বরআতের কথা উল্লেখ আছে। তবে কুরআন শরীফে বরআতের রাতকে ‘লাইলাতুম মুবারকাহ’ আর হাদীছ শরীফে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান’ বলা হয়েছে।
অনেকে বলে থাকে যে, সূরা দুখান-এর উক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা শবে ক্বদরকে বুঝানো হয়েছে। কেননা উক্ত আয়াত শরীফে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে, “আমি কুরআন শরীফ নাযিল করেছি ….” আর কুরআন শরীফ যে ক্বদরের রাত্রিতে নাযিল হয়েছে তা ‘সূরায়ে ক্বদরেও’ উল্লেখ আছে। মূলতঃ যারা উপরোক্ত মন্তব্য করে থাকে তারা ‘সূরা দুখান-এর’ উক্ত আয়াত শরীফ-এর সঠিক ব্যাখ্যা না জানা ও না বুঝার কারণেই করে থাকে। মহান আল্লাহ পাক যে ‘সূরা দুখান’-এ বলেছেন, “আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিল করেছি।” এর ব্যাখ্যামূলক অর্থ হলো, “আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিলের ফায়সালা করেছি।”
আর ‘সূরা ক্বদরে’ যে বলেছেন, “আমি ক্বদরের রাত্রিতে কুরআন শরীফ নাযিল করেছি।” এর ব্যাখ্যামূলক অর্থ হলো, “আমি ক্বদরের রাত্রিতে কুরআন শরীফ নাযিল শুরু করি।” অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক “লাইলাতুম মুবারকাহ বা শবে বরআতে” কুরআন শরীফ নাযিলের সিদ্ধান্ত নেন আর শবে ক্বদরে তা নাযিল করা শুরু করেন।এজন্যে মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম শবে বরআতকে ﺍﻟﺘﺠﻮﻳز ﻟﻴﻠﺔ অর্থাৎ ‘ফায়সালার রাত।’ আর শবে ক্বদরকে ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺘﻨﻔﻴﺬ অর্থাৎ ‘জারী করার রাত’ বলে উল্লেখ করেছেন। কেননা শবে বরআতে যে সকল বিষয়ের ফায়সালা করা হয় তা ‘সূরা দুখান-এর’ উক্ত আয়াত শরীফেই উল্লেখ আছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, “উক্ত রজনীতে প্রজ্ঞাসম্পন্ন সকল বিষয়ের ফায়সালা করা হয়।” হাদীছ শরীফেও উক্ত আয়াতাংশের সমর্থন পাওয়া যায়। যেমন ইরশাদ হয়েছে, “বরআতের রাত্রিতে ফায়সালা করা হয় কতজন সন্তান আগামী এক বৎসর জন্ম গ্রহণ করবে এবং কতজন সন্তান মৃত্যু বরণ করবে। এ রাত্রিতে বান্দাদের আমলগুলো উপরে উঠানো হয় অর্থাৎ আল্লাহ পাক-উনার দরবারে পেশ করা হয় এবং এ রাত্রিতে বান্দাদের রিযিকের ফায়সালা করা হয়।” (বায়হাক্বী, মিশকাত)
কাজেই, আল্লাহ পাক তিনি যেহেতু বলেছেন যে, বরকতময় রজনীতে সকল কাজের ফায়সালা করা হয় আর তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও যেহেতু বলেছেন যে, বরআতের রজনীতেই সকল বিষয় যেমন- হায়াত, মউত, রিযিক, আমল ইত্যাদি যা কিছু মানুষের প্রয়োজন হয়ে থাকে তার ফায়সালা করা হয় সেহেতু বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, “সূরা দুখান-এর” উক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা শবে বরআতকেই বুঝানো হয়েছে। অতএব এ রাতে নফল নামাজ, সালাতুত তাসবীহ (নামাজ) তাহাজ্জুদ নামাজ কোরআন শরীফ তিলাওয়াত, জিকির,তসবীহ, এস্তেগফার, দরূদ,মীলাদ শরীফের মধ্যমে রাত কাটানো উত্তম।
[দলীলসমূহঃ ১) সূরা দুখান ২) তাফসীরে দুররে মনছূর, ৩) কুরতুবী, ৪) মাযহারী, ৫) তিরমিজী, ৬) ইবনে মাজাহ, ৭) বায়হাকী, ৮) মিশকাত ৯) মিরকাত ১০) আশয়াতুল লুময়াত ১১) ত্বীবি ১২) মুজাহারে হ্বক
=================================================
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ إن الحمد لله نحمده ونستعينه ونستغفره ونعوذ بالله من شرور أنفسنا ومن سيئات أعمالنا من يهده الله فلا مضل له ومن يضلل فلا هادي له، وأشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له وأشهد أن محمدا عبده ورسوله-اما بعد
“শব” শব্দটা ফার্সি। যার অর্থ হল-রাত। আর বরআত এটি আরবী শব্দ। মূলত
হল- ﺑﺮﺍﺀﺕ যার অর্থ হল “মুক্তি” তথা জাহান্নাম থেকে মুক্তির রাত হল শবে বরআত। বরাত বলাটা ভুল। কারণ শবে বরাত(ﺑﺮﺍﺕ ) মানে হল বিয়ের রাত। সুতরাং আমরা বলব-শবে বরআত( ﺷﺐ ﺑﺮﺍﺀﺕ )শবে বরআতকে হাদিসের পরিভাষায় বলা হয়েছে “লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান"( ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎن ) তথা শাবানের অর্ধ মাসের রাত্রি।
শবে বরআত হচ্ছে ইসলামের বিশেষ রাত্রিসমূহের মধ্যে একটি রাত্র। যা শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্রিতে হয়ে থাকে। শবে বরআত-এর অর্থ হচ্ছে ‘মুক্তির রাত’ বা ‘নাজাতের রাত।’
শবে বরআত সম্পর্কে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ বর্ণনা ‘শব’ ফার্সী শব্দ। যার অর্থ হচ্ছে, রাত। আর বরআত আরবী শব্দ যা উর্দূ, ফার্সী, বাংলা ইত্যাদি সব ভাষাতেই ব্যবহার হয়ে থাকে। যার অর্থ ‘মুক্তি’ ও ‘নাজাত’ ইত্যাদি। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর ভাষা যেহেতু আরবী তাই ফার্সী ‘শব’ শব্দটি কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ না থাকাটাই স্বাভাবিক।
স্মর্তব্য যে, কুরআন শরীফ-এর ভাষায় ‘শবে বরআতকে’ ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ বা বরকতময় রজনী’ এবং হাদীছ শরীফ-এর ভাষায় শবে বরআতকে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান’ বা শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই আমি বরকতময় রজনীতে (শবে বরআতে) কুরআন শরীফ নাযিল করেছি অর্থাৎ নাযিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর আমিই ভয় প্রদর্শনকারী।উক্ত রাত্রিতে আমার পক্ষ থেকে সমস্ত প্রজ্ঞাময় কাজগুলো ফায়সালা করা হয়। আর নিশ্চয়ই আমিই প্রেরণকারী।” (সূরা দুখান-৩, ৪, ৫)
আর হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
ﻋﻦ ﺍﻡ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﺣﻀﺮﺕ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻗﺎﻟﺖ ﻓﻭﺳﻠﻢ ﻟﻴﻠﺔ ﻓﺎﺫﺍ ﻫﻮ ﺑﺎﻟﺒﻘﻴﻊ ﻓﻘﺎﻝ ﺍﻛﻨﺖ ﺗﺨﺎﻓﻴﻦ ﺍﻥ ﻳﺤﻴﻒ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻚ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ ﻗﻠﺖ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻧﻰ ﻇﻨﻨﺖ ﺍﻧﻚ ﺍﺗﻴﺖ ﺑﻌﺾ ﻧﺴﺎﺋﻚ ﻓﻘﺎﻝ ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻳﻨﺰﻝ ﻟﻴﻠﺔ
ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻓﻴﻐﻔﺮ ﻻﻛﺜﺮ ﻣﻦ ﻋﺪﺩ ﺷﻌﺮ ﻏﻨﻢ ﻛﻠﺐ
অর্থঃ উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহ’র হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার সাথে কোন এক রাত্রিতে রাত্রি যাপন করছিলাম। এক সময় তাঁকে বিছানা মুবারক-এ না পেয়ে আমি মনে করলাম যে, তিনি হয়তো অন্য কোন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিস সালামের হুজরা শরীফে তাশরীফ নিয়েছেন। অতঃপর আমি তালাশ করে তাঁকে জান্নাতুল বাক্বীতে পেলাম। সেখানে তিনি উম্মতের জন্য আল্লাহ পাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। এ অবস্থা দেখে আমি স্বীয় হুজরা শরীফে ফিরে আসলে তিনিও ফিরে এসে আমাকে বললেন, আপনি কি মনে করেছেন, আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার সাথে আমানতের খিয়ানত করেছেন! আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি ধারণা করেছিলাম যে, আপনি হয়তো অপর কোন হুজরা শরীফে তাশরীফ নিয়েছেন।
অতঃপর হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি শা’বানের ১৫ তারিখ রাত্রিতে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর তিনি বনী কালবের মেষের গায়ে যতো পশম রয়েছে তার চেয়ে অধিক সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে থাকেন।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, রযীন, মিশকাত)
অতএব প্রমাণিত হলো যে, কুরআন শরীফ হাদীছ শরীফেই শবে বরআতের কথা উল্লেখ আছে। তবে কুরআন শরীফে বরআতের রাতকে ‘লাইলাতুম মুবারকাহ’ আর হাদীছ শরীফে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান’ বলা হয়েছে।
অনেকে বলে থাকে যে, সূরা দুখান-এর উক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা শবে ক্বদরকে বুঝানো হয়েছে। কেননা উক্ত আয়াত শরীফে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে, “আমি কুরআন শরীফ নাযিল করেছি ….” আর কুরআন শরীফ যে ক্বদরের রাত্রিতে নাযিল হয়েছে তা ‘সূরায়ে ক্বদরেও’ উল্লেখ আছে। মূলতঃ যারা উপরোক্ত মন্তব্য করে থাকে তারা ‘সূরা দুখান-এর’ উক্ত আয়াত শরীফ-এর সঠিক ব্যাখ্যা না জানা ও না বুঝার কারণেই করে থাকে। মহান আল্লাহ পাক যে ‘সূরা দুখান’-এ বলেছেন, “আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিল করেছি।” এর ব্যাখ্যামূলক অর্থ হলো, “আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন শরীফ নাযিলের ফায়সালা করেছি।”
আর ‘সূরা ক্বদরে’ যে বলেছেন, “আমি ক্বদরের রাত্রিতে কুরআন শরীফ নাযিল করেছি।” এর ব্যাখ্যামূলক অর্থ হলো, “আমি ক্বদরের রাত্রিতে কুরআন শরীফ নাযিল শুরু করি।” অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক “লাইলাতুম মুবারকাহ বা শবে বরআতে” কুরআন শরীফ নাযিলের সিদ্ধান্ত নেন আর শবে ক্বদরে তা নাযিল করা শুরু করেন।এজন্যে মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম শবে বরআতকে ﺍﻟﺘﺠﻮﻳز ﻟﻴﻠﺔ অর্থাৎ ‘ফায়সালার রাত।’ আর শবে ক্বদরকে ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺘﻨﻔﻴﺬ অর্থাৎ ‘জারী করার রাত’ বলে উল্লেখ করেছেন। কেননা শবে বরআতে যে সকল বিষয়ের ফায়সালা করা হয় তা ‘সূরা দুখান-এর’ উক্ত আয়াত শরীফেই উল্লেখ আছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, “উক্ত রজনীতে প্রজ্ঞাসম্পন্ন সকল বিষয়ের ফায়সালা করা হয়।” হাদীছ শরীফেও উক্ত আয়াতাংশের সমর্থন পাওয়া যায়। যেমন ইরশাদ হয়েছে, “বরআতের রাত্রিতে ফায়সালা করা হয় কতজন সন্তান আগামী এক বৎসর জন্ম গ্রহণ করবে এবং কতজন সন্তান মৃত্যু বরণ করবে। এ রাত্রিতে বান্দাদের আমলগুলো উপরে উঠানো হয় অর্থাৎ আল্লাহ পাক-উনার দরবারে পেশ করা হয় এবং এ রাত্রিতে বান্দাদের রিযিকের ফায়সালা করা হয়।” (বায়হাক্বী, মিশকাত)
কাজেই, আল্লাহ পাক তিনি যেহেতু বলেছেন যে, বরকতময় রজনীতে সকল কাজের ফায়সালা করা হয় আর তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও যেহেতু বলেছেন যে, বরআতের রজনীতেই সকল বিষয় যেমন- হায়াত, মউত, রিযিক, আমল ইত্যাদি যা কিছু মানুষের প্রয়োজন হয়ে থাকে তার ফায়সালা করা হয় সেহেতু বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, “সূরা দুখান-এর” উক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা শবে বরআতকেই বুঝানো হয়েছে। অতএব এ রাতে নফল নামাজ, সালাতুত তাসবীহ (নামাজ) তাহাজ্জুদ নামাজ কোরআন শরীফ তিলাওয়াত, জিকির,তসবীহ, এস্তেগফার, দরূদ,মীলাদ শরীফের মধ্যমে রাত কাটানো উত্তম।
[দলীলসমূহঃ ১) সূরা দুখান ২) তাফসীরে দুররে মনছূর, ৩) কুরতুবী, ৪) মাযহারী, ৫) তিরমিজী, ৬) ইবনে মাজাহ, ৭) বায়হাকী, ৮) মিশকাত ৯) মিরকাত ১০) আশয়াতুল লুময়াত ১১) ত্বীবি ১২) মুজাহারে হ্বক