#ত্রিপুরার_ইতিহাস।
ভারত প্রজাতন্ত্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভূ-বেষ্টিত পার্বত্য একটি প্রদেশ। ত্রিপুরা হল উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি রাজ্য। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ১৫ থেকে ৯৪০ মিটার। রাজ্যটির রাজধানী আগরতলা।
ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক : ২৩°৮৪′ উত্তর ৯১°২৮′পূর্ব।
ত্রিপুরার সীমানা ও আয়তন
এই রাজ্যের উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমে বাংলাদেশ এবং পূর্বে ভারতের আসাম ও মিজোরাম প্রদেশ। এটি একটি স্থলবেষ্টিত রাজ্য। এর মোট আয়তন ১০৪৯২ বর্গ কিলোমিটার।
ইতিহাস
মহাভারতে বর্ণি রাজা যযাতির ঔরসে শর্মিষ্ঠার গর্ভজাত পুত্রের নাম ছিল। এই দ্রুহ্যের ৩৯তম বংশধর ত্রিপুর-এর নামানুসারে এই রাজ্যের নাম ত্রিপুরা হয়েছে। অন্যমতে দশমহাবিদ্যারূপী দুর্গার একটি নাম ত্রিপুরাসুন্দরী। এই নাম থেকে ত্রিপুরা নামের উৎপত্তি। অন্যমতে‒ ত্রিপুরা রাজ্যের স্থানীয় আদিবাসী ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ভাষার নাম ককবরক। এই ভাষায় 'তৈ' হল 'জল' আর 'প্রা' হলো নিকটে। দুইয়ে মিলে 'তৈ-প্রা' জলের নিকটবর্তী স্থান। তেপ্রা, তিপ্রা শব্দ পরিবর্তিত হয় বাংলা এবং অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় ত্রিপুরা নাম ধারণ করেছে।
খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০-৫০০ অব্দের ভিতরে রচিত মহাভারতে ত্রিপুরা নামটি পাওয়া যায়। খ্রিষ্টীয় ১৪শ শতকে রচিত রাজমালাতে (ত্রিপুরার মাণিক্য রাজবংশের কাহিনি) ত্রিপুরার উল্লেখ পাওয়া গেছে। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ত্রিপুরা ভারতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পূর্বাবধি অঞ্চলটি মাণিক্য রাজবংশ ধারাবাহিকভাবে শাসন করে। কথিত আছে প্রায় ২৫০০ বছর ধরে এই রাজ্য ১৮৬জন রাজা শাসন করেছেন। ব্রিটিশ-ভারতে ত্রিপুরা একটি স্বাধীন করদ রাজ্য ছিল। দক্ষিণ ত্রিপুরায় অবস্থিত উদয়পুর ছিল ভূতপূর্ব স্বাধীন রাজতান্ত্রিক ত্রিপুরার রাজধানী। খ্রিষ্টীয় অষ্টাদশ শতকে মহারাজ কৃষ্ণ মাণিক্য পুরাতন আগরতলায় রাজধানী স্থানান্তরিত করেন এবং পরবর্তীকালে খ্রিষ্টীয় ঊনবিংশ শতাব্দীতে রাজধানী অধুনা আগরতলায় স্থানান্তরিত হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীকে ত্রিপুরার আধুনিক যুগের সূচনা হয়। কারণ, এই সময় মহারাজ বীরচন্দ্র মাণিক্য বাহাদুর দেববর্মা ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থার অনুকরণে তাঁর প্রশাসনকে পুনর্গঠিত করেন এবং বিভিন্ন সংস্কার সাধন করেন।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ত্রিপুরা ভারত প্রজাতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। এই সময় তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত বাঙালি শরণার্থীরাই ত্রিপুরার জনসংখ্যার গরিষ্ঠ অংশ হয়ে ওঠে। ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে ত্রিপুরা একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত হয়। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ২১ জানুয়ারি ত্রিপুরা একটি পূর্ণাঙ্গ রাজ্য হিসেবে স্বীকৃত হয়।
ত্রিপুরার প্রশাসন
ত্রিপুরা ৫টি বিভাগে বিভাজিত। এই বিভাগগুলো হলো- ত্রিপুরা সদর, বিশালঘর, সোনামুড়া
, খোয়াই এবং তেলিয়ামুড়া। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে মোট চারটি জেলা ছিল। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের
২১ জানুয়ারি আগের চারটি জেলা ভেঙে মোট ৮টি জেলা করা হয়। এই জেলা এবং জেলা সদরের তালিকা নিচে তুলে ধরা হলো।
জেলা জেলা সদর
উত্তর ত্রিপুরা ধর্মনগর
উনকোটি কৈলাসহর
খোয়াই খোয়াই
সিপাহিজালা বিশ্রামগঞ্জ
গোমাটি উদয়পুর
দক্ষিণ ত্রিপুরা বিলোনা
পশ্চিম ত্রিপুরা আগরতলা
ধলাই আম্বাসা
ত্রিপুরার জনগণ
২০১১ খ্রিষ্টাব্দের হিসাব অনুসারে, ত্রিপুরার মোট জনসংখ্যা ৩৬,৭১,০৩২ জন। এই জনসংখ্যার ৭০% বাঙালি, বাকি ৩০% বিভিন্ন ভাষাভাষীর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। ভাষাভেদে বাংলা ছাড়া রয়েছে, ককবরক, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি, মৈতে মনিপুরি, চাকমা, কুকি, মিজো, আরাকানিজ ইত্যাদি। জনসংখ্যার মোট ৮৫ ভাগ হিন্দু, ৪ ভাগ মুসলমান, ৩,২ ভাগ খ্রিষ্টান, অবশিষ্ট মানুষ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।
ত্রিপুরার কৃষি ও বনজ সম্পদ
পেশাগতভাবে ত্রিপুরার মোট জনসংখ্যার ৬৪ শতাংশই কৃষির সাথে যুক্ত। ত্রিপুরায় উৎপন্ন প্রধান খাদ্যফসলগুলো হলো‒ ধান, তৈলবীজ, ডাল, আলু এবং আখ। এছাড়া চা ও রাবার এ রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পণ্যফসল। ত্রিপুরা হল "ভারতীয় রাবার বোর্ড" দ্বারা ঘোষিত দেশের দ্বিতীয় রাবার রাজধানী এবং এর স্থান কেরলের পরেই। ত্রিপুরার হস্তশিল্পও অত্যন্ত বিখ্যাত। ২০০০-২০০১ আর্থিক বছরে এ রাজ্যের মাথাপিছু আয় বর্তমান মূল্যে হল ১০,৯৩১ টাকা এবং স্থায়ী মূল্যে হল ৬,৮১৩ টাকা।
ত্রিপুরার উত্তরাংশে অরণ্যাবৃত পাহাড় ও উপত্যকা, আর দক্ষিণে গহীন জঙ্গল। শাল, গর্জন এবং টিক সহ কিছু উৎকৃষ্ট মানের কাঠ ত্রিপুরার বনাঞ্চলে পাওয়া যায়। এছাড়া ত্রিপুরা খনিজ সম্পদে বিশেষ সমৃদ্ধ না হলেও এখানে ভাল প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপন্ন হয়। তবে শিল্পক্ষেত্রে ত্রিপুরা এখনও অনগ্রসর।
আবহাওয়া
আর দক্ষিণাংশ গহীন জঙ্গল। এই অঞ্চলে প্রতি বছর এখানে ৪,০০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত হয়। সেই তুলনায় ত্রিপুরার পশ্চিমাঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হয়।
ভারত প্রজাতন্ত্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভূ-বেষ্টিত পার্বত্য একটি প্রদেশ। ত্রিপুরা হল উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি রাজ্য। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ১৫ থেকে ৯৪০ মিটার। রাজ্যটির রাজধানী আগরতলা।
ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক : ২৩°৮৪′ উত্তর ৯১°২৮′পূর্ব।
ত্রিপুরার সীমানা ও আয়তন
এই রাজ্যের উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমে বাংলাদেশ এবং পূর্বে ভারতের আসাম ও মিজোরাম প্রদেশ। এটি একটি স্থলবেষ্টিত রাজ্য। এর মোট আয়তন ১০৪৯২ বর্গ কিলোমিটার।
ইতিহাস
মহাভারতে বর্ণি রাজা যযাতির ঔরসে শর্মিষ্ঠার গর্ভজাত পুত্রের নাম ছিল। এই দ্রুহ্যের ৩৯তম বংশধর ত্রিপুর-এর নামানুসারে এই রাজ্যের নাম ত্রিপুরা হয়েছে। অন্যমতে দশমহাবিদ্যারূপী দুর্গার একটি নাম ত্রিপুরাসুন্দরী। এই নাম থেকে ত্রিপুরা নামের উৎপত্তি। অন্যমতে‒ ত্রিপুরা রাজ্যের স্থানীয় আদিবাসী ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ভাষার নাম ককবরক। এই ভাষায় 'তৈ' হল 'জল' আর 'প্রা' হলো নিকটে। দুইয়ে মিলে 'তৈ-প্রা' জলের নিকটবর্তী স্থান। তেপ্রা, তিপ্রা শব্দ পরিবর্তিত হয় বাংলা এবং অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় ত্রিপুরা নাম ধারণ করেছে।
খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০-৫০০ অব্দের ভিতরে রচিত মহাভারতে ত্রিপুরা নামটি পাওয়া যায়। খ্রিষ্টীয় ১৪শ শতকে রচিত রাজমালাতে (ত্রিপুরার মাণিক্য রাজবংশের কাহিনি) ত্রিপুরার উল্লেখ পাওয়া গেছে। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ত্রিপুরা ভারতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পূর্বাবধি অঞ্চলটি মাণিক্য রাজবংশ ধারাবাহিকভাবে শাসন করে। কথিত আছে প্রায় ২৫০০ বছর ধরে এই রাজ্য ১৮৬জন রাজা শাসন করেছেন। ব্রিটিশ-ভারতে ত্রিপুরা একটি স্বাধীন করদ রাজ্য ছিল। দক্ষিণ ত্রিপুরায় অবস্থিত উদয়পুর ছিল ভূতপূর্ব স্বাধীন রাজতান্ত্রিক ত্রিপুরার রাজধানী। খ্রিষ্টীয় অষ্টাদশ শতকে মহারাজ কৃষ্ণ মাণিক্য পুরাতন আগরতলায় রাজধানী স্থানান্তরিত করেন এবং পরবর্তীকালে খ্রিষ্টীয় ঊনবিংশ শতাব্দীতে রাজধানী অধুনা আগরতলায় স্থানান্তরিত হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীকে ত্রিপুরার আধুনিক যুগের সূচনা হয়। কারণ, এই সময় মহারাজ বীরচন্দ্র মাণিক্য বাহাদুর দেববর্মা ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থার অনুকরণে তাঁর প্রশাসনকে পুনর্গঠিত করেন এবং বিভিন্ন সংস্কার সাধন করেন।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ত্রিপুরা ভারত প্রজাতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। এই সময় তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত বাঙালি শরণার্থীরাই ত্রিপুরার জনসংখ্যার গরিষ্ঠ অংশ হয়ে ওঠে। ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে ত্রিপুরা একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত হয়। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ২১ জানুয়ারি ত্রিপুরা একটি পূর্ণাঙ্গ রাজ্য হিসেবে স্বীকৃত হয়।
ত্রিপুরার প্রশাসন
ত্রিপুরা ৫টি বিভাগে বিভাজিত। এই বিভাগগুলো হলো- ত্রিপুরা সদর, বিশালঘর, সোনামুড়া
জেলা জেলা সদর
উত্তর ত্রিপুরা ধর্মনগর
উনকোটি কৈলাসহর
খোয়াই খোয়াই
সিপাহিজালা বিশ্রামগঞ্জ
গোমাটি উদয়পুর
দক্ষিণ ত্রিপুরা বিলোনা
পশ্চিম ত্রিপুরা আগরতলা
ধলাই আম্বাসা
ত্রিপুরার জনগণ
২০১১ খ্রিষ্টাব্দের হিসাব অনুসারে, ত্রিপুরার মোট জনসংখ্যা ৩৬,৭১,০৩২ জন। এই জনসংখ্যার ৭০% বাঙালি, বাকি ৩০% বিভিন্ন ভাষাভাষীর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। ভাষাভেদে বাংলা ছাড়া রয়েছে, ককবরক, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি, মৈতে মনিপুরি, চাকমা, কুকি, মিজো, আরাকানিজ ইত্যাদি। জনসংখ্যার মোট ৮৫ ভাগ হিন্দু, ৪ ভাগ মুসলমান, ৩,২ ভাগ খ্রিষ্টান, অবশিষ্ট মানুষ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।
ত্রিপুরার কৃষি ও বনজ সম্পদ
পেশাগতভাবে ত্রিপুরার মোট জনসংখ্যার ৬৪ শতাংশই কৃষির সাথে যুক্ত। ত্রিপুরায় উৎপন্ন প্রধান খাদ্যফসলগুলো হলো‒ ধান, তৈলবীজ, ডাল, আলু এবং আখ। এছাড়া চা ও রাবার এ রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পণ্যফসল। ত্রিপুরা হল "ভারতীয় রাবার বোর্ড" দ্বারা ঘোষিত দেশের দ্বিতীয় রাবার রাজধানী এবং এর স্থান কেরলের পরেই। ত্রিপুরার হস্তশিল্পও অত্যন্ত বিখ্যাত। ২০০০-২০০১ আর্থিক বছরে এ রাজ্যের মাথাপিছু আয় বর্তমান মূল্যে হল ১০,৯৩১ টাকা এবং স্থায়ী মূল্যে হল ৬,৮১৩ টাকা।
ত্রিপুরার উত্তরাংশে অরণ্যাবৃত পাহাড় ও উপত্যকা, আর দক্ষিণে গহীন জঙ্গল। শাল, গর্জন এবং টিক সহ কিছু উৎকৃষ্ট মানের কাঠ ত্রিপুরার বনাঞ্চলে পাওয়া যায়। এছাড়া ত্রিপুরা খনিজ সম্পদে বিশেষ সমৃদ্ধ না হলেও এখানে ভাল প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপন্ন হয়। তবে শিল্পক্ষেত্রে ত্রিপুরা এখনও অনগ্রসর।
আবহাওয়া
আর দক্ষিণাংশ গহীন জঙ্গল। এই অঞ্চলে প্রতি বছর এখানে ৪,০০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত হয়। সেই তুলনায় ত্রিপুরার পশ্চিমাঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হয়।